Farmzila Foods Ltd

Address

267/274, Cosmopoliton Road,East Nasirabad, Panchlaish,Chattogram.

Hotline

01701444446
01888227787

E-mail

info@farmzila.com.bd
support@farmzila.com.bd

এক সময়ের সমৃদ্ধ আয়ুর্বেদ আজ কেন এত পিছিয়ে পড়েছে, আর আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান কেন বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে? এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক কারণ। আসুন, সহজভাবে বিষয়টি বুঝে নিই।

কেন আয়ুর্বেদ পিছিয়ে পড়ল, আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানএতএগিয়ে গেল?
কেন আয়ুর্বেদ পিছিয়ে পড়ল, আর আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানএতএগিয়ে গেল?

ঔপনিবেশিক শাসন আয়ুর্বেদের পতন

ঔপনিবেশিক শাসনের সময় ইউরোপে রাসায়নিক শিল্প বিপ্লব চলছিল। প্রচুর রাসায়নিক কারখানা স্থাপিত হচ্ছিল এবং ব্রিটিশরা তাদের অধীনস্থ দেশগুলোতে রাসায়নিক পদার্থের বিক্রি বাড়াতে চেয়েছিল। একই সঙ্গে, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পও দ্রুত বিকশিত হতে থাকে, কারণ ওষুধ তৈরির জন্য প্রচুর রাসায়নিক প্রয়োজন ছিল।

এই সময়েই ব্রিটিশরা ইংরেজি শিক্ষা আইন (English Education Act) প্রণয়ন করে। ১৮৩৫ সালে চালু হওয়া এই আইনের ফলে আয়ুর্বেদসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা হারায়। শুধুমাত্র ইংরেজিতে শেখানো বিজ্ঞান ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হয়। অথচ আয়ুর্বেদ চর্চা তখন হিন্দি, তামিল, মালায়ালাম বা কন্নড় ভাষার ওপর নির্ভরশীল ছিল, যার ফলে এটি সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়।

ফলে অধিকাংশ আয়ুর্বেদ কলেজ বন্ধ হয়ে যায় বা ধ্বংস করা হয়। কারখানাগুলোও কাজ বন্ধ করে দেয়। স্বাধীনতার আগেও কিছু কারখানা স্থাপিত হলেও পরিস্থিতি আয়ুর্বেদের অনুকূলে ছিল না। এমনকি ডাক্তাররাও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ঝুঁকতে থাকেন, কারণ সেটাই তখন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মূল ধারা হয়ে উঠেছিল।

আয়ুর্বেদের বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক অবদান

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, আয়ুর্বেদ প্রায় ,০০০ বছর আগে অস্ত্রোপচারের (সার্জারি) ধারণা উদ্ভাবন করেছিল। প্রাচীন চিকিৎসক সুশ্রুত প্রথমবারের মতো কসমেটিক সার্জারি, সিজারিয়ান অপারেশন এবং রাইনোপ্লাস্টি (নাক পুনর্গঠন) করেছিলেন। আজও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান স্বীকার করে যে, ফাদার অব সার্জারি হলেন সুশ্রুত।

তবে বর্তমান সময়ে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার করার অনুমতি নেই। বরং, আধুনিক চিকিৎসকেরাই সিদ্ধান্ত নেন যে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করতে পারবেন কি না। এটি সত্যিই আশ্চর্যের বিষয় যে বিজ্ঞানসমূহের জননী হিসেবে পরিচিত আয়ুর্বেদকে অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আয়ুর্বেদ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান একসঙ্গে কাজ করতে পারে কীভাবে?

পশ্চিমা চিকিৎসা, বিশেষ করে শল্যচিকিৎসা (সার্জারি), তীব্র জীবনহুমকির রোগের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ—

হার্ট অ্যাটাক
গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত
হাড় ভাঙা (ফ্র্যাকচার)
সংক্রামক রোগ যেখানে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন

তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো সমাধান দিতে পারেনি। যেমন—

অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের সমস্যা)
রিউমেটিক আরথ্রাইটিস (গাঁটের ব্যথা)
সর্দিকাশি, সাইনাস, জ্বর বা ত্বকের রোগ

আধুনিক চিকিৎসা মূলত উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখে, কিন্তু রোগের মূল কারণ দূর করতে পারে না। অন্যদিকে, আয়ুর্বেদ, ন্যাচুরোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং যোগব্যায়াম জীবনযাত্রা খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ নিরাময় করতে পারে।

আয়ুর্বেদ বনাম অ্যালোপ্যাথি: সমন্বিত চিকিৎসার প্রয়োজন

আমাদের বুঝতে হবে যে—

তীব্র বা জরুরি অবস্থার জন্য আধুনিক চিকিৎসা অপরিহার্য।
দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর।
পশ্চিমা চিকিৎসা বা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার পরে রোগীকে পুনরুদ্ধারের জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

অনেকে বলেন, অ্যালোপ্যাথি পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত,” যা একটি ভুল ধারণা। আবার অনেক আধুনিক চিকিৎসক আয়ুর্বেদকে স্বীকৃতি দিতে চান না।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দুই চিকিৎসাব্যবস্থা একত্রে কাজ করলেই মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।

আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমেই সুস্থ থাকতেন এবং আজ আমরা তাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বেঁচে আছি। তাই বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যের সমন্বিত প্রয়োগই হতে পারে আমাদের ভবিষ্যতের পথ।

লেখক: মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী
(কম্পিউটার প্রকৌশলী, গবেষক:খাদ্য, পুষ্টি এবং অন্ত্র-মাইক্রো ভায়োম,Gut-Micro Viom)

আরো পড়ুন: ভিটামিন বি ১২ এর নানা গুন

0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Shop